মিঠাপুকুরের কিছু প্রাচীন ও দর্শনীয় স্থান

পায়রাবন্দ জমিদার বাড়িঃ


পায়রাবন্দ জমিদার বাড়ি একটি প্রাচীন নিদর্শন। ধারণা করা হয় অষ্টাদশ শতাব্দির দিকে তৈরি। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।




অবস্থানঃ
রংপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত এই বাড়িটি যেখানে নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়া জন্ম গ্রহন করেন।


বেগম রোকেয়া উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ও মাতার নাম রাহাতুন্নেসা চৌধুরী। বেগম রোকেয়ার পিতা ছিলেন পায়রাবন্দের জমিদারীর সর্বশেষ উত্তরাধিকারী। তার মাতা ছিলেন টাঙ্গাইলের বলিয়াদিও জমিদার পরিবারের কন্যা।


বেগম রোকেয়ার বাড়ির এখন আর তেমন কিছুই অবশিষ্ট নাই । যা আছে তা হলো শুধু ভাঙ্গা দেয়াল ও খুঁটি। যা সংরক্ষণ এর দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ।

বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রঃ


নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ৩,৫৩,০০,০০০ টাকা ব্যয়ে ১ জুলাই, ২০০১ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলাধীন পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়ার নিজ বাড়ী সংলগ্ন ৩.১৫ একর ভূমিতে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপিত হয়। নির্মিত অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে মূলভবন ১৪,৭১০ বর্গফুট, ২৫০ আসনের সুসজ্জিত মিলনায়তন (শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ), ১০০ আসনের সুসজ্জিত সেমিনার কক্ষ, ৫০ জন পাঠকের পাঠ সুবিধাসহ ১০ হাজার গ্রন্থের ধারণ ক্ষমতাসহ সুসজ্জিত গ্রন্থাগার এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ গবেষণা কক্ষ।

ফুলচৌকি মসজিদঃ


ফুলচৌকি মসজিদ বাংলাদেশের রংপুর জেলারমিঠাপুকুর উপজেলার একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি মোঘল আমলের দিকে তৈরি। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

অবস্থানঃ


রংপুর থেকে ২৪ কিমি দক্ষিণে গড়ের মাথা নামক স্থান হয়ে পশ্চিম দিকে বিরামপুর-দিনাজপুর সড়কে শুকুরের হাট হয়ে সেখান থেকে আরও ২ কিলোমিটার পশ্চিমে ফুলচৌকি গ্রামে এর অবস্থান।


ফুলচৌকি নামক স্থানে অবস্থিত বলেই সম্ভবতঃ এই গ্রামকে কেন্দ্র করে মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে।

বিবরণঃ


এই মসজিদটি খুব সুন্দর। মসজিদটি আয়তকার এবং প্রতিটি কোণায় গোলাকার কিউপলা যুক্ত স্তম্ভ রয়েছে। যার নিচের অংশ কলসাকৃতি।


মসজিদের সামনে খোলা অঙ্গন (সাহান) অনুচ্চ প্রাচীর বা বেস্টনী দ্বারা আবৃত। মসজিদের প্রবেশ দ্বার পূর্বপাশ ঘেষে একটি পরিকল্পিত এলাকা, যেটি এখন কবর স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে; যদিও সেখানে একসময় শোভা পেত স্থাপত্য সৌন্দ্যর্য মন্ডিত শোভিত ও সৌরভমুখরিত ফুল বাগান।

মিঠাপুকুর বড় মসজিদঃ

বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন এখানে

বাগদুয়ার ঢিবিঃ
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের মিঠাপুকুর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। বাগদুয়ারা হল হারিয়ে যাওয়া অনেক পুরানো কীর্তির মত একটি কীর্তি। বর্তমান এর প্রকৃত অস্তিত্ব কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখে অনুমান করা হয়। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরএর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

অবস্থানঃ
মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভেন্ডাবাড়ির পাশে উদয়পুর ধাপ অবস্থিত। উদয়পুর থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগদুয়ারার অবস্থান।

বিবরণীঃ
বাগদুয়ার ঢিবিটির সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। জনশ্রুতি অনুসারে, বাগদুয়ারার মন্দিরটি নামকরণ করা হয়েছে বাগদেবীর নামানুসারে। বর্তমানে জীর্ণ মন্দিরটির চারপাশেই পূর্বে প্রাচীনকৃর্তি ছিল বলে মনে করা হয়। স্থানীয় লোককথা অনুসারে, উদয়পুর-বাগদুয়ারার রাজা ছিলেন ভবচন্দ্র। তিনি ছিলেন নাথসাহিত্যের নায়ক গোপীচন্দ্রের পুত্র। এই রাজাদের আমলেই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, এটি বৌদ্ধ রীতিতে তৈরি মন্দির।

মিঠাপুকুর পুকুরঃ
সম্রাট  আওরঙ্গজেবের  আদেশে  মীর জুমেলা  কোচ বিহার ও  আসাম  অভিযান  কালে মিঠাপুকুর  অঞ্চলে এসে পৌছলে বিশাল  বাহিনীর  সুপেয়  পানির  চাহিদা  পূরণে  তিনি  একটি  পুকুর  খননের  আদেশ  দেন।  মীর জুমেলার  আদেশে  খননকৃত  পুকুরের  নামানুসারে  এলাকাটি মিঠাপুকুর  নামে  পরিচিত হয়।  মতামত্মরে  শাহ্ ইসমাইল গাজীর আদেশে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল।   

অবস্থান ও সীমানা পরিচিতিঃ
ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন মিঠাপুকুর বাস স্ট্যান্ডের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত মৌজা- কাশীপুর -২৫৩,  কৃষ্ণপুর -১২২, খঃনং-৭,৮,১২,১৬,  দাগ নং-১২৭,১২৮/১২৬=১৩.৯৪ একর এবং ২৩৩,১৫৪=০.৭২ মোট জমি ১৪৬৬ একর।

ভবচন্দ্রের রাজবাড়িঃ
কালের বিবর্তণে ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে প্রাচীন এই নিদর্শনটি বর্তমানে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।

কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
উপজেলা সদয় হতে বড়দরগাহ হাইওয়ে রোড হয়ে সোজা পশ্চিম দিকে ১০ কিঃমিঃ। ভিমশহর মৌজায় অবস্থিত।

বলদীপুকুর ক্যাথলিক মিশনঃ
ক্যাথলিক মিশন টি ১৯৫১ সালে স্থাপিত হয়। ক্যাথলিক মিশন টি রংপুর- ঢাকা মহাসড়ক থেকে ১ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে লতিবপুর ইউনিয়ন এ অবস্থিত ।ক্যাথলিক মিশনে একজন ফাদার ও ৬জন স্টাফ আছে। ক্যাথলিক মিশন সংলগ্ন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। 

মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যানঃ
মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যানটি রংপুর বিভাগীয় শহর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার মচিরমাড়া রামেশ্বপুর মৌজার শালটি গোপালপুর সার জে এল নং-৮৩, সি.এস দাগ নং-১২.১৯.০২৮ হেক্টর সংরক্ষিত বন এলাকা।
       
রংপুর মহাসড়ক মিঠাপুকুর হতে পশ্চিমে ৮.০ কিঃ মিঃ মোসলেম বাজার “মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যান” (শালটি গোপালপুর) ৪.০ কিঃ মিঃ উক্ত মহা সড়ক এর শঠিবাড়ী হতে “মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যান” (শালটি গোপালপুর) ৮.০ কিঃ মিঃ। রংপুর শহর হতে দর্শনা, মোসলেম বাজার হতে “মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যান” ২৪.০ কিঃ মিঃ এবং ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) হতে মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যান ৪০ কিঃ মিঃ।

এখানে প্রায় ১৫০ বছরের পুরানো শাল গাছ রয়েছে। মাঝে মধ্যে উলডট, কৃষি, বাঁশ ও বেত বাগান সৃজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতীর বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখা যায়। জাতীয় উদ্যান ঘোষনার পর শোভা বর্ধনকারী ও ভেষজ উদ্ভিদের বাগান সৃজন কাজ চলিতেছে। বিভাগীয় শহর রংপুর হতে বাসযোগে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক মিঠাপুকুর নেমে সিএনজি/অটো রিক্সা যোগে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া রংপুর হতে ফুলবাড়ী রাস্তায় দর্শনা হয়ে মোসলেম বাজার নেমে ভ্যান/অটো-রিক্সাযোগে মিঠাপুকুর জাতীয় উদ্যানে যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। 

এছাড়াও রয়েছে শালটি গোপালপুর রাবার বাগান।

তনকা মসজিদঃ
লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদে তনকা মসজিদ মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জানা যায় যে এই মসজিদটি মোঘল আমলের কৌশলে নির্মিত হয়েছিলো। এখানে অনেক মাজার ও একটি বিশাল পুকুর আছে। 

কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
ঢাকা- রংপুর মহাসড়ক এর জায়গীর বাসষ্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে ৭.০০ কিঃমিঃ দুরে আটো রিক্সা/ ভ্যান যোগে যাওয়া যায়।

বেনুবন বৌদ্ধ বিহারঃ
স্থান : মিঠাপুকুর, রংপুর। বৌদ্ধ পরিবারের সংখ্যা: ২৫০টি, অবস্থানকরী ভিক্ষু: শ্রীমৎ শীলব্রত ভিক্ষু। মিঠাপুকুর বেনুবন বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে।

এছাড়াও অাছে-
- চানপুর জেতবন বৌদ্ধ বিহার
- বর্তমান লাহনী পায়রাচত্ত্বর

No comments: